আপনি ইন্টারনেটে যাই করেন না কেন, তা কিন্তু সবসময় আপনার নামেই থাকবে এবং চাইলেও আপনি তা এড়িয়ে যেতে পারবেন না।

 

আমরা সবাই প্রায়শই বোকার মত কাজ করে থাকি। সভ্যতার আদিকাল থেকেই এমনটি হয়ে আসছে। আগে এমন ছিল যে হয়ত শুধুমাত্র অল্প কয়েকজনই আমাদের বোকামি পর্যবেক্ষণ করতে পারত, কিন্তু এখন সেটাও নেই। আপনার নিজের বাসায় আপনি যা করে থাকেন তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আপনি লিংকড ইন, টুইটার আর ফেইসবুকে যা পোস্ট করছেন তা কিন্তু অনেকেই দেখতে পায় এবং তা কিন্তু সারা জীবনের জন্য আপনার নামে সেখানেই থাকবে।

বিষয়টিকে এভাবে দেখুনঃ আপনি ইন্টারনেটে যাই করেন না কেন, তা কিন্তু সবসময় আপনার নামেই থাকবে এবং চাইলেও আপনি তা এড়িয়ে যেতে পারবেন না। এবং এটাই সত্যি। যে আপনার সাথে কাজ বা ব্যবসা পরিচালনা করতে চাচ্ছেন এবং তা শুধুমাত্র আজকের জন্য নয় বরং সব সময়ের জন্য। সে অবশ্যই আপনার ব্যাপারে গুগলে সার্চ করবে এবং সোস্যাল মিডিয়াতে আপনার উপস্থিতি লক্ষ্য করবে। আর এর ফলেই কিন্তু অনেকেই পুরনো কোন কাজের জন্য তাদের ক্যারিয়ার আর নিজস্ব ব্র্যান্ডের সুনাম হারাচ্ছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে বলা হয় বড় বড় কোম্পানির ৭০% সিইও এর সোস্যাল মিডিয়াতে কোন উপস্থিতি নেই যা লেখকের কাছে ভাল আইডিয়া হিসেবে মনে হয়নি। তবে কেউ কেউ হয়ত বলবে যে এসব সিইও রা ঠিক কাজটিই করেছেন। এখানে ৯টি দিক তুলে ধরা হল যার মাধ্যমে হয়ত আপনি অনলাইনে নিজেকে বোকা বানাচ্ছেন যার ফলে আপনার কর্ম সম্ভাবনা এবং সোস্যাল নেটওয়ার্কে আপনার সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে।

 

ব্যক্তিগত জীবনের কথা।

একজনের টুইটারে লেখা ছিল এরকম, “জীবনটা খুবই অসুখী” এখন কথা হল, যিনি ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী তিনি কর্মজীবনে তার প্রভাবমুক্ত হতে পারবেন তো? এই অবস্থায় কেউই আপনার প্রোফাইলের ব্যাপারে তোয়াক্কা করবে না এবং আপনার প্রোফাইলে আপনি যাই দিন না কেন, তা ততটা কার্যকর হবে না।

 

আমাকে দেখুন আমি একটি ডিগ্রি অর্জন করেছি।

এখন এই চলটি প্রায়শই দেখা যায়। আজকাল সবাই তাদের লিংকড ইন ও অন্যান্য প্রওফাইলে নিজের নামের সাথে ভূরি ভূরি ডিগ্রি যোগ করছেন যেমন এমবিএ, এমএ, পিই, পিএমপি, সিপিসিসি, এমপিএস, এইচসিএস, এমএড আর কত কী! এটি করার কোন মানে হয় না, এর মাধ্যমে হয়ত আপনি এটা বলতে চাইছেন, “হ্যালো, আমি অমুক, আর আমার কাছে সবচেয়ে ভাল যে জিনিসটি আছে তা হল কয়েকটি মূল্যহীন ডিগ্রি যা আমি ২০ বছর আগে অর্জন করেছিলাম এবং আমার মত এরকম অনেক ডিগ্রিধারী আছে।” এটা আবার এক ধরনের দূরত্বও তৈরি করে।

 

এটি ফেইসবুকে আছে তাই এটি নিরাপদ ও গোপনীয় থাকবে।

আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ চাকরির ইন্টারভিউতে যাচ্ছেন কিন্তু আপনার প্রোফাইলে রয়েছে আপত্তিকর ছবি বা আপনার ফেসিবুকে আপনি আপনার রাজনৈতিক বিশ্বাস, ধর্মীর বিশ্বাস এবং গত সপ্তাহের পার্টিতে কী হয়েছিল তার সবই লিখে রেখেছেন। এখন ফেইসবুকের একটি নিরাপত্তা ত্রুটি হলে সেসব তথ্যই কিন্তু গুগল জেনে যাবে এবং তখন তা সব সময়েই অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যাবে।

 

আমি একজন সিইও। 

আজকাল যাদেরই টুইটার অ্যাকাউন্ট আর একটি আইপি ঠিকানা আছে, সেই সিইও বনে যাচ্ছে। সিইও একটি আইনসিদ্ধ পদবী যা একটি বাস্তব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। আপনার যদি ক্ষুদ্র ব্যবসা, একক ব্যবসা বা একটি এলএলসি থাকে, তাহলে আপনি নিজেকে যা খুশি নাম দিতে পারেন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি একজন সিইও হয়ে গেছেন।

 

আমি যা নিয়ে কাজ করছি তা নিয়ে আমি এতই গর্বিত যে আমি আমার সব প্রতিযোগীর সাথে তা শেয়ার করব।

এক্সিকিউটিভ, উদ্যোক্তা ও নেতাদের যা বলা উচিত নয় তারা সেটাই মিডিয়াকে বলেন আর ইমেইলে সব অস্বস্তিকর বিবৃতি প্রদান করে থাকেন যা কোন না কোন ভাবে আদালতে পেশ হয়েই যায়। শীর্ষ এক্সিকিউটিভরা লিংকড ইনে অন্য প্রতিযোগীদের তাদের কৌশল জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ার নষ্ট করছে। ফরেস্টার রিসার্চ সার্ভে অনুযায়ী, ১৫০টি কোম্পানির মধ্যে ৮২% শতাংশই প্রতিযোগীদের গতিবিধি সোস্যাল মিডিয়াতে পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

 

আমি একজন পণ্ডিত।

যারা নিজেদেরকে পন্ডিত বলে থাকে তারা আসলে আত্ম-কেন্দ্রিক, আত্ম-মগ্ন ও আত্ম-বড়াইকারী ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের আত্ম-বিশ্বাস আর আত্ম-মর্যাদা বলতে গেলে কোন কিছুই নেই। ২০১২ এর ৩১শে ডিসেম্বরে লেক সুপেরিওর স্টেট ইউনিভার্সিটি যেসব শব্দ নিষিদ্ধ করা উচিত সে সম্পর্কে ৩৮তম বার্ষিক অনুষ্ঠানে একটি তালিকা প্রণয়ন করে যেখানে ‘গুরু বা পন্ডিত’ শব্দটিও স্থান পেয়েছে।

 

আমি আগন্তুকদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে থাকি।

আপনি কী রাস্তায় দেখা এক আগন্তুকের কাছে সাহায্য চাইবেন? না। এটি জরুরি কোন সাহায্য নয়, অতি সাধারণ জিনিসের জন্য সাহায্য চাওয়া। নিশ্চয়ই আপনি এমনটি করবেন না। অনেকেই কিন্তু অপরিচিত লোকদের কাছে লিংকড ইনে তাদের দক্ষতা সমর্থন (রেফারেন্স) করতে বলে বা তাদের জন্য সুপারিশ লিখে দিতে বলে যা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

 

আমি একটি কিউট কার্টুন চরিত্র।

যদি আপনি মজা করার জন্য নিজের ক্যারিকেচার বা কার্টুন চরিত্রের আভ্যাটার দিতে চান, তাহলে দিতে পারেন। হয়ত কোন কোন নিয়োগ কর্মকর্তা ও সম্ভাব্য ক্রেতারা আপনার এই মজা বুঝে নেবে এবং আপনি যে কাজের ব্যাপারে উদাসীন এমনটি হয়ত ভাববে না। কিন্তু সব সময় যে এমন হবে তাও তো বলা যায় না। নিজের প্রোফাইলে আপনি আপনার নিজের বা পরিবারের সাথে ছবি দেওয়াটাই যুক্তিগত, কার্টুন চরিত্র ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

 

আমি বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি ব্যবহার করি।

ইন্টারনেটে অনেকেই দিন নেই রাত নেই বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি এদিক সেদিক করে পোস্ট করে বেড়ায়। এখন যারা অন্যদের উক্তি শেয়ার করায় ব্যস্ত থাকে, তারা এই কাজটি না করে হয়ত নিজের মত করে চিন্তা করার কিছু সময় পেত এবং হয়ত নিজেদেরই কোন উক্তি আবিষ্কার করতে পারত। সবাই অনলাইনে নিজেদেরকে ভালভাবে তুলে ধরতে চায়। সবকিছু সহজ রাখুন। সংখ্যার পরিবর্তে মান নিয়ে চিন্তা করুন। এবং কোন কিছু পোস্ট করার আগে চিন্তা ভাবনা করে তারপর পোস্ট করুন।

Similar Posts

Leave a Reply