এখন পর্যন্ত স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ হলই পরীক্ষিত সবচেয়ে শক্তিশালী ফোন এবং এর সুবিশাল ফুল এইচডি স্ক্রিন বাজারের সেরা। তবে এর প্লাস্টিকের খোলস এটির একটি বড় অসুবিধা এবং অনেকের কাছে তা ব্যবহারে ঝামেলা মনে হতে পারে। কিন্তু এটি যে আসলেই একটি অসাধারণ ফোন তাতে কোন দ্বিমত নেই।
ভালো দিক
|
মন্দ দিক
|
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ কেনা উচিত কেন?
যদি আপনি সর্বোচ্চ মানের ফোন চান, তাহলে আপনার এটা অবশ্যই কেনা উচিত। আগের এস৩ মডেলে সব ফিচারকেই স্যামসাং এই নতুন মডেলে উন্নত করেছে। এর ৫ ইঞ্চি ফুল এইচডি স্ক্রিন বাজারের সেরা এবং এর কোয়াড কোর প্রসেসর ফোনে কাজ করার দ্রুত গতি নিশ্চিত করে।
এছাড়াও আছে স্যামসাং এর নিজস্ব কিছু সফটওয়্যার, এর কিছু কিছু কাজে না লাগলেও, অন্যগুলো বেশ কাজের। মনে রাখবেন, এই অতিরিক্ত সফটওয়্যারের জন্য হয়ত ফোনটি ব্যবহার করার আপনার কাছে ঝামেলার মনে হতে পারে। যদি আপনি সহজবোধ্য কোন ফোন চান, তাহলে আপনি আইফোন বা উইন্ডোজ ৮ চালিত নকিয়ার লুমিয়া সিরিজ দেখতে পারেন।
এর ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে অসাধারণ ছবি তুলতে গেলে আপনাকে কিছু ট্রিকস ব্যবহার করতে হবে। তবে সাধারণত এর ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো আহামরি না হলেও তা আপনার ফেইসবুক প্রোফাইলকে আরো ঝকঝকে করতে সাহায্য করবে। ফোনের মূল সমস্যা হল এর প্লাস্টিক ডিজাইন যা আগের এস৩ এর মতই। যদি আপনি অন্যদেরকে আপনার ফোন দেখাতে চান, তাহলে এস৪ দেখে অন্যরা হয়ত ধরতে পারবে না যে আপনি লেটেস্ট মডেলটিই ব্যবহার করছেন।
ডিজাইন এবং আকারের মান
সামনে থেকে দেখলে এটি এস৩ নাকি এস৪ তা বলা মুশকিল। দুটোরই বড় গ্লাস ফ্রন্ট, প্রশস্ত হোম বাটন এবং স্লিম, সিলভার রঙের স্পিকার রয়েছে যার নিচে স্যামসাং এর লোগো আছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুটোর মধ্যে পার্থক্যও আছে। ভাল করে দেখতে গেলে, এস৪ এর কোণাগুলো একটু বেশি চোখা এবং এর ফ্রেম বেশ সরু। এর মানে হল স্ক্রিন সাইজ বড় হলেও এর আগের মডেলের থেকে এটি আকারে তেমন একটা বড় নয়। এস৩ এর মাপগুলোই মোটামুটি এস৪ এ ব্যবহার করা হয়েছে তবে এস৪ হল এস৩ এর চেয়ে কম পুরু। কোণাগুলোতে দেখতে পাবেন মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট, ৩.৫মিমি হেডফোন জ্যাক, পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম কন্ট্রোল।
স্টোরেজ
স্যামসাং আগেই বলেছে ফোনটি ১৬, ৩২ বা ৬৪ জিবি স্টোরেজ বহন করবে, তবে এখন পর্যন্ত শুধু ১৬ জিবি মডেল অবমুক্ত করা হয়েছে। যদি আপনি বেশি স্টোরেজ মডেলগুলো চান, তাহলে হয় আপনাকে সরাসরি স্যামসাং এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে বা আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
স্ক্রিন
এস৪ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল এর ৫ ইঞ্চি স্ক্রিন যাতে রয়েছে সত্যিকারের ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল রেজুলুশন যা হল ফুল এইচডি। আগের এস৩ তে ছিল ৭২০পি রেজুলুশন, তবে ফোনে কাজ করতে গেলে পার্থক্যটা খুব একটা চোখে পড়বে না। এস৪ এর স্ক্রিনটি বেশ শার্প এবং এতে আছে আইকন ও টেক্সট যার লেখাগুলো বেশ পরিষ্কার। অনলাইনে বড় বড় অনুচ্ছেদ এতে বেশ সাচ্ছ্বন্দ্যেই পড়া যায় এবং হাই ডেফিনিশন ছবিগুলো এতে অসাধারণ দেখায়।
এয়ার জেসচার, এয়ার ভিউ ও স্মার্ট পজ
এর চমৎকার ডিসপ্লেকে তৈলাক্ততা থেকে রক্ষা করতে, স্যামসাং এতে জেসচার নেফিগেশন জুড়ে দিয়েছে। এয়ার জেসচার দ্বারা আপনি ফোনের সামনে হাত নাড়িয়েই এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন – ডানে-বামে যাওয়া আর ওয়েব পেইজের উপরে-নিচে যাওয়া। তবে এটি কিছু নির্দিষ্ট অ্যাপসের সাহায্যে কাজ করে। ফিচারটি অত কঠিন কিছু না, তবে ওয়েব পেইজ পড়ার সময় উপরে-নিচে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে আপনার কাজে আসবে। স্ক্রিনটি সুপার-সেনসিটিভ এবং আপনি ফোনের স্ক্রিনকে স্পর্শ না করে সেটির উপরে আপনার আঙ্গুল নাড়াচাড়া করলে তা এটি শনাক্ত করতে সক্ষম। গ্যালাক্সি নোট ২তেও এই ফিচার রয়েছে, তবে এস৪ এ আপনাকে এর জন্য কোন স্টাইলাস ব্যবহার করতে হবে না।
গ্যালাক্সি নোটে এয়ারভিউ স্যামসাং ইমেল অ্যাপ না খুলেই ক্যালেন্ডারের ইভেন্ট ও ইমেইলের প্রিভিউ দেখাত। আর এস৪ এ এটি ছাড়াও এয়ারভিউ দিয়ে আপনি ভিডিও প্লেয়ারে কোন ভিডিও চলার সময় নির্দিষ্ট কোন সময়ে স্পর্শ করলে ভিডিওর ঐ অংশের প্রিভিউও দেখাবে যার ফলে আপনি ভিডিওতে আপনার পছন্দের অংশে খুব সহজে যেতে পারবেন।
স্ক্রিনের হাই সেনসিটিভিটির কারণে আপনি হাতে গ্লোভস পরেও তা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে মোটা গ্লোভস পরিহিত অবস্থায় এটি কাজ করবে না, তাই গ্লোভস খুলেই তা ব্যবহার করা শ্রেয়। এস৪ এ আরো আছে স্মার্ট পজ যার ফলে আপনার চোখের ইশারা শনাক্ত করে যেকোন পেজ পড়ার সময় এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচের অংশে নিয়ে যাবে বা অন্যদিকে তাকালে চলমান ভিডিওকে স্থগিত করে রাখবে। আবার ভিডিওর দিকে তাকালে তা আপনাআপনিই আবার চলতে শুরু করবে। কাজের করার সময় এটি দরকারি হতে পারে, তবে যদি ফোনে আপনি ২ ঘন্টার কোন মুভি দেখেন তাহলে সব সময় আপনার চোখের ইশারা স্থির রাখা ঝামেলা হতে পারে।
স্যামসাং সফটওয়্যার
এস৪ এর পরিচিত ডিজাইন দেখেও যদি আপনার মন না ভরে, তাহলে আপনার জন্য স্যামসাং কিছু বাড়তি সফটওয়্যার এই ফোনে যোগ করে দিয়েছে। ওয়াচ অন আপনার এস৪ কে আপনার টিভির সাথে যুক্ত করবে, টিভি অনুষ্ঠানের তালিকা দেখাবে এবং ইনফ্রারেড পোর্টের সাহায্যে আপনি আপনার পছন্দের চ্যানেলে সহজেই যেতে পারবেন। অপটিকাল রিডার দিয়ে ক্যামেরা ব্যবহার করেই অগমেন্টেড রিয়ালিটি ডিসপ্লের সাহায্য লেখা অনুবাদ করতে পারবেন – অন্য দেশে গিয়ে ভিন দেশী ভাষায় লেখা রাস্তাঘাটের চিহ্ন বুঝতে এটি কাজে আসবে। বিজনেস কার্ডের ছবি তুলুন এবং ছবিটি পরিষ্কার হলে তা ছবিতে লেখা টেলিফোন নম্বর ও ঠিকানা শনাক্ত করতে পারবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সেভ করে রাখবে। যদি আপনি কোন কনফারেন্সে যান এবং ১০০টির মত বিজনেস কার্ড সঙ্গে করে নিএ আসেন, তখন এই ফিচারটি আপনার দরকার পড়বে।
ব্যায়াম আর স্বাস্থ্যচর্চার জন্য রয়েছে এস হেলথ। এতে আপনার লিঙ্গ, উচ্চতা, শারীরিক ওজন আর কিছু ব্যক্তিগত তথ্য যোগ করলেই তা আপনার ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা ও ব্যায়ামের রুটিনের দেখভাল করবে যাতে আপনি বাড়তি ওজন অনায়াসে ঝরাতে পারেন। জ বোন আউ বা নাইকি ফুয়েলব্যান্ডের মত স্যামসাং এরও একটি স্পোর্টস ব্যান্ড আছে যা আপনার ব্যায়ামের খেয়াল রাখে।
এন্ড্রোয়েড ৪.২.২ জেলি বিন
বাড়তি স্যামসাং সফটওয়্যার ছাড়া, এর সার্বিক ইন্টারফেস কিন্তু এস৩ এর থেকে তেমন একটা ভিন্ন নয়। এতে পাবেন ৬টি হোমস্ক্রিন যাতে আপনি পছন্দের অ্যাপস ও লাইভ উইজেটস যোগ করতে পারবেন। যেই হোমস্ক্রিনেই আপনি থাকুন না কেন, নিচে সব সময় ৪টি আইকন প্রদর্শিত হবে যার ফলে আপনি আপনার সর্বাধিক ব্যবহৃত অ্যাপসগুলোতে সহজেই যেতে পারবেন। কোন উইজেট যোগ করতে হলে হোমস্ক্রিনের উপর চেপে ধরলেই মেনু আসবে বা আপনি উইজেট ট্যাব দিয়ে অ্যাপস লিস্টে গিয়েও তা করতে পারেন। একই কাজ ভিন্ন ভাবে করার এই বৈশিষ্ট্য স্যামসাং ফোনগুলোতে নতুন কিছু নয় এবং এটি সব সময় কাজেও আসে না।
স্যামসাং তার ফোনগুলোতে নিজস্ব ওয়েব ব্রাউজার আর ইমেল ক্লায়েন্ট যুক্ত করে দেয় যাতে এর নিজস্ব অ্যাপসগুলো সব সময়ে চোখে পড়ে। এন্ড্রোয়েড ফোন হওয়াতে এতে একটি ক্রোম ব্রাউজারও রয়েছে, আরো আছে জিমেইল, গুগল প্লে স্টোর যার ফলে আপনি এন্ড্রোয়েড মানদন্ডের অনেক অপশন পাবেন।
ক্যামেরা
এস৩ এর ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা থেকে বর্তমানের এস৪ এর ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা একটি যুগান্তকারী উন্নতি বলা চলে। এটি এখন সনি এক্সপেরিয়া জেড এর ক্যামেরার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং এইচটিসি ওয়ানের ৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার তুলনায় অনেক ভাল। পিক্সেলের মাত্রা সব সময় সবকিছু না – এইচটিসি বলে থাকে এর পিক্সেল কম হলেও সেগুলো আকারে বড়, ফলে ছবির মান হয় ভাল – তাই পিক্সেলের চেয়ে ক্যামেরাটি কতটা ভালভাবে কাজ করে সেটাই মূল বিষয়। সব ক্ষেত্রেই এস৪ শীর্ষ মান ধরে রাখতে পেরেছে। এইচটিসি ওয়ানের ছবি কিছু ফ্যাকাসে দেখায় আর নকিয়ার লুমিয়া ৯২০ এর ছবিগুলো হয় একটু গাঢ় রঙের, সে তুলনায় এস৪ এর ক্যামেরা ছবি ঝকঝকে এবং প্রাণবন্ত হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো থাকা সাপেক্ষে এইচডিআর দৃশ্য এবং ঘরের ভেতরে ছবি তোলার ক্ষেত্রেও এস৪ ক্যামেরার জুড়ি নেই। তবে কম আলোয় এস৪ ভাল মানের ছবি তুলতে পারেনি। ফ্ল্যাশ ছাড়া ছবিগুলো হয়ে উঠে অন্ধকার, দানাদার এবং অস্পষ্ট। কম আলোয় নোকিয়া লুমিয়া ৯২০ ভাল মানের ছবি তুলতে সক্ষম। যদি লো লাইট ফটোগ্রাফ্রিতে আপনার আগ্রহ থাকে, তাহলে নোকিয়া লুমিয়া ৯২০ আপনার জন্য ভাল হবে।
ব্যাটারি
অনেকের কাছেই বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, পরিচিত মানুষজন ও ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগের জন্য স্মার্টফোন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যে কাজেই আপনি এটি ব্যবহার করুন না কেন, চার্জ দেওয়ার পর থেকে এতি যাতে দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা যায় সেটা অনেক জরুরি। তবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্ক্রিন ও প্রসেসরের কারণের বেশিরভাগ স্মার্টফোনকেই প্রতিদিনই চার্জে দিয়ে রাখতে হয়। এস৪ও এর ব্যতিক্রম নয়। ফুল ব্রাইটনেস ও ৪জি নেটওয়ার্কে ফোনটি ব্যবহারের পর দেখা গেছে ব্যাটারির ধারণক্ষমতা ৩ ঘন্টার মধ্যেই অর্ধেকে নেমে এসেছে যা মোটেও শুভ কিছু নয়। আপনি যদি ফোন বেশি ব্যবহার নাও করেন, তাও আপনাকে তা প্রতিনিয়তই চার্জে দিয়ে রাখতে হবে।
৪জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করা, ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা ও চাহিদাসম্পন্ন কাজ যেমন গেমিং এর পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি ব্যাটারির আয়ু বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন। এর মানে এই নয় যে এত দাম দিয়ে ফোনটি কিনে আপনি পারতপক্ষে এটির ব্যবহারের মজা থেকে বঞ্চিত হবেন। যদি সাবধান থাকেন, তাহলে একদিন ইচ্ছেমত আপনি ফোনটি ব্যবহার করতেই পারেন তবে এর জন্য আপনাকে একে পর্যাপ্ত পরিমাণে চার্জ দিয়ে রাখতে হবে।
প্রধান বিররণ
পণ্যের ধরন |
স্মার্ট ফোন |
কানেক্টিভিটি |
ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই, ৩জি, এইচএসপিএ, ৪জি |
অপারেটিং সিস্টেম |
গুগল এন্ড্রোয়েড |
অ্যাপ্লিকেশন স্টোর |
আছে |
টাচ স্ক্রিন |
আছে |
ঙ্কিবোর্ড |
নেই |
জিপিএস |
আছে |
ফর্ম ফ্যাক্টর |
ক্যান্ডি-বার |
উপলব্ধ রঙ |
কালো, সাদা |
স্ক্রিন সাইজ |
৫ ইঞ্চি |
ক্যামেরা রেজুলুশন |
১৩ মেগাপিক্সেল |
আকার (প্রxঊxপু) |
১৩.৬x৬৮.৯x৭.৯ মিমি |
ওজন |
১৩০ গ্রাম |
[অনুবাদ]