দুপুরের লাঞ্চে কি খাওয়া যায় থেকে শুরু করে হাই প্রোফাইল ক্লায়েন্টের সাথে কি বলবেন পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই আমাদেরকে প্রতিদিন নানা রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এসব সিদ্ধান্ত ঠিকভাবে নেয়া- এবং এসব সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়াই আমাদেরকে জীবনে সফল করে।

এজন্যে আপনার সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে উন্নত করতে হবে। আপনার সমস্যাটিকে সনাক্ত করা এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্যে বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে যায়। আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেটি ঠিক করতে পারলে সমাধানে পৌছাতে কম সময় লাগবে।

কোন কঠিন পরিস্থিতি সমাধান করার ক্ষেত্রে এই ৬টি টেকনিক ব্যবহার করতে পারেনঃ

 

ধাপে ধাপে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গড়ে তুলুন :

মনোবিজ্ঞানী এবং গবেষকেরা যেকোন সমস্যা সমাধানের টেকসই সমাধানের জন্যে একটি সিস্টেমেটিক কৌশল বের করেছেন। এই কৌশলটি সাধারণত সমস্যা সমাধান চক্র হিসেবে পরিচিত যেটা শুরু হয় সমস্যাটি শনাক্তকরণের মাধ্যমে। একই পরিস্থিতিতে নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে। আপনি ভুল সমস্যাটির উপরে ফোকাস করতে পারেন।

সমস্যাটি সনাক্ত করার পর একটি স্ট্র্যাটেজি গঠন করুন। আপনার পরিস্থিতি এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে এটি ভিন্ন হতে পারে কিন্তু আপনার উৎসগুলোর উপর ভিত্তি করে আপনার কয়েকটি সমাধান তৈরী করে রাখা উচিত। একাধিক সমাধান ভেবে রাখা উচিত যাতে বেশি অপশন পাওয়া যায়।

 

আপনার তথ্যগুলোকে সংগঠিত করুন :

আপনি আপনার সমস্যা সম্পর্কে কি জানেন আর কি জানেন না। যত বেশি সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করুন। এতে ইতিবাচক ফলাফল অর্জনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

একটি সমাধান ঠিক করার পর এর অগ্রগতি লক্ষ করুন। আপনি যে সমাধানটি ঠিক করেছেন সেটি পরিমেয় হওয়া উচিত যাতে আপনি এটির গন্তব্যে পৌঁছেছেন কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন। যদি না হয়, আপনাকে একটি বিকল্প কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে।

সবশেষে ফলাফলটি মূল্যায়ন করুন। কিভাবে আপনার সমাধানটি আপনার লক্ষ্যের বিরুদ্ধে কাজ করছে? আপনি কি বাজেটের মধ্যে থাকতে পারবেন? যদি তাই হয় তাহলে আপনার সমাধানটি ঠিক ছিল। যদি না হয় সেক্ষত্রে  একটি ভিন্ন পদ্ধতি চেষ্টা করুন।

 

সমাধান ভিত্তিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন :

প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু আপনি কি সঠিক প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করছেন?

ধরুন আপনার আরো গ্রাহক প্রয়োজন। “কেন আমি আরো গ্রাহক পাচ্ছি না?” জিজ্ঞাসা না করে  সমাধান-ভিত্তিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন- “আমি কি আমার প্রতিযোগীদের চেয়ে আলাদা তিনটি জিনিস করতে পারি?” অথবা “১০ জন নতুন গ্রাহক পেতে আগামী মাসে কি করতে হবে?”

 

আপনার মনোভাব পরিবর্তন করুন :

যখন কোন একটি সমস্যাকে আপনার বোঝা হিসেবে মনে হয় তখন সেটিকে এড়িয়ে চলুন। হতাশাজনক, অপ্রতিরোধ্য, বা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব এমন কোনকিছু কে মোকাবিলা করতে চায়?

যদি আপনি চ্যলেঞ্জগুলোকে আপনার বড় হওয়ার মাধ্যম হিসেবে দেখতে পারেন তবে আপনার সমাধান খুঁজে পেতে কম চাপ হবে । তাছাড়া আপনি সমস্যাটিকে আরো সহজে বিশ্লেষণ করবেন যা ভবিষ্যতেও কাজে লাগবে। কিন্তু এই মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনগুলি রাতারাতি ঘটে না। আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে যে জীবনে সমস্যা অনিবার্য। যত তাড়াতাড়ি আপনি এটি মেনে নিতে পারবেন তত সহজে যেকোন সিদ্ধান্তহীনতাকে মোকাবিলা করতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, যেকোন পরিস্থিতিতে প্রথমেই আসা নেতিবাচক মনোভাব থেকে দূরে থাকুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি সকালে আপনার গাড়ী চালু না হয় তবে আপনার প্রথম চিন্তাটিই হবে গাড়িটি মেরামত করতে কত খরচ হবে । সেসময় প্রকৃত সমস্যাটির উপর মনোযোগ দিন: “গাড়িটি চালু হবে না।”

প্রকৃত নেতিবাচক পরিণতিগুলির একটি তালিকা তৈরি করুন – সবচেয়ে খারাপ কি ঘটতে পারে। সমস্যাটির সত্যিকারের  প্রভাব সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে আপনার মনে হতে পারে যে সমস্যাটিকে খারাপ বলে মনে হচ্ছে ততটা খারাপ না।

পরিশেষে আপনার উন্নতির উপর ফোকাস করুন। “আমার গাড়ী চালু হবে না ,এটাকে মেরামত করতে হবে।” এর পরিবর্তে, আপনার বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পরিস্থিতি বিবেচনা করুন: “যেহেতু আমার গাড়ী চালু হবে না সেক্ষেত্রে ট্রেন ধরতে 10 মিনিটের আগেই চলে যাওয়া উচিত।” অন্যান্য বিকল্পগুলিও দেখুন।

 

আপনার হাত দিয়ে কাজ করুন :

সাবেক ডেট্রয়েট লিয়ন্সের ওয়াইড রিসিভার এবং মহাকাশচারী লেল্যান্ড মেলভিনের মতে, আমাদের নিজেদের হাত দিয়ে করা পরীক্ষামূলক শিক্ষা, যেমন লেগো দিয়ে খেলা, অল্প বয়সে সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দেয়।

প্রাপ্তবয়স্করা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্যে তাদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে দাবা, সুডোকু বা রুবিক্স কিউব দিয়ে খেলতে পারে।

 

অন্যদের কাছে সাহায্য চাইতে শিখুন :

আপনার ইগোকে দূরে সরিয়ে অন্যদের কাছে সাহায্য চাইতে শিখুন। আপনি যদি নিজে নিজেই সমস্যাটি সমাধান করতে পারেন তবুও  অন্যদের সাথে কাজ করলে তারা নতুন নতুন আইডিয়া এবং পয়েন্ট দেখাতে পারে যা হয়ত আপনি নিজে ভাবতে পারতেন না।

এই অভ্যাস শুরু করার জন্যে  বন্ধুরা এবং পরিবার সবচেয়ে ভাল জায়গা কারণ তারা আপনাকে নিঃস্বার্থভাবে সহায়তা করবে এবং উৎসাহ দিবে। সহকর্মীরাও বিচক্ষণ পরামর্শ দিতে পারে। আপনার শিক্ষক, কোচ, অথবা আপনি যাদের শ্রদ্ধা করেন তারা যেভাবে সমস্যা সমাধান করে সেটিকে রোল মডেল হিসেবে ধরতে পারেন।

 

সমস্যা সমাধানের পর সেটি উদযাপন করতে সময় নিন :

আপনাকে আপনার অর্জনগুলো উদযাপন করতে হবে। এটি কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে সফল হওয়ার জন্য যা দরকার তা  আপনার আছে এই বিশ্বাসটিকে দৃঢ় করার একটি সহজ উপায়। এটি আপনাকে আপনার সময়কে অগ্রাধিকার দিতে সহায়তা করবে যাতে আপনি যেটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ সেটাতে ফোকাস করতে পারেন।

 

[অনুবাদ]

Similar Posts

Leave a Reply