নেতৃত্ব দানের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল সাহস থাকা। ভয়ের মুখোমুখী হয়ে তা জয় করার মাধ্যমেই এটি অর্জিত হয়। এবং এর প্রতিদানও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
সাহস হল উঠে দাঁড়ানো এবং বলতে পারার সামর্থ্য, সাহস হল বসে অন্যদের কথা শুনতে পারার সামর্থ্যও। -উনস্টন চার্চিল
ধরুন আপনি বোর্ডরুমে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর আপনি আপনার প্রেজেন্টেশনের শেষ স্লাইডে চলে এসেছেন। এমন সময় আপনার সিইও বিরক্তির সাথে উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, “আপনি কী দাম কমানো ছাড়া আর কোন মার্কেটিং শেখেননি?”
প্রতি উত্তরে আপনি বললেন, “জ্বী না স্যার, আমি এটা ছাড়াও অন্যগুলোও শিখেছি। তবে আমরা এমনটি না করলে, আমরা টিকে থাকতে পারব না।”
আপনার ওরকম রাগী এবং কঠোর মনোভাব সম্পন্ন সিইও এর সামনে আপনি যে উত্তরটি দিয়েছেন তার জন্য আপনার ভেতর সাহস সঞ্চার করতে হয়েছে আবার একই ভাবে আপনার সিইও যে ধৈর্য নিয়ে আপনার কথা শুনেছেন এবং মাছের কাছে শুকনো ভূমি যেমন ঠিক সেরকম আপনার সিইও এর কাছে এইরকম বিদঘুটে প্রস্তাবে যে তিনি শেষ পর্যন্ত রাজি হতে পেরেছেন – এর মাধ্যমেই কিন্তু তিনিও তার সাহসের পরিচয় দিয়েছেন।
নেতৃত্ব দানের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল সাহস থাকা।ভয়ের মুখোমুখী হয়ে তা জয় করার মাধ্যমেই এটি অর্জিত হয়। এবং এর প্রতিদানও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমান ও আগামী দিনের এক্সিকিউটিভ, ব্যবসা মালিক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য, সাহস থাকা মানে হল …
অন্যরা পাগল বলা সত্বেও নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া। গুগলের সহ প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ এবং সারগেই ব্রিন বছরের পর বছর চেষ্টা করেছিলেন যাতে মানুষজন তাদের পরিপূর্ণ সার্চ কোম্পানির আইডিয়াতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। তারা কখনও হার মানেননি। উদ্যোক্তারা সবসময় এমনটাই করে থাকে।
কোন লাভ এবং সুরক্ষা ছাড়াই বড় ধরনের ঝুঁকি নেওয়া। এটা কি জিনিস তা প্রত্যেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভাল করেই জানেন। এটি অবশ্যই ভয়ংকর একটি অভিজ্ঞতা যার ফলে আপনার রাতের ঘুমও চলে যেতে পারে। মাঝে মধ্যে এটিকে রুখে দিতে প্রয়োজন আপনার ইচ্ছাশক্তি এবং সাহস।
দুঃসংবাদ দেওয়া। একজন ব্যবস্থাপক বা ব্যবসা মালিকের জন্য সবচেয়ে কঠিন জিনিস হল তার কর্মচারী, গ্রাহক বা বিনিয়োগকারীরা যা শুনতে চায় না তাদেরকে সেটাই বলা এবং সরাসরি বলা।
সমালোচকদের মুখোমুখী তাদের কথা শোনা। নিজের ইগো এবং ওদ্ধত্যের চেয়ে যদি আপনার সাহস আর বিনয় বেশি থাকে তাহলে আপনার দ্বারা এটি করা অসম্ভব হবে না।
কষ্ট হতে পারে জেনেও নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করা। যখন হোল ফুডসের সিইও জন ম্যাকি তার দা হোল ফুডস অল্টারনেটিভ টু ওবামাকেয়ার লিখেছেন, তখন তিনি জানতেন যে তার গ্রাহক হারাবার ঝুঁকি রয়েছে। এবং অনেকেই তার সুপারমার্কেট চেইনকে বয়কটও করেছিল।
বড় ও আর্থিকভাবে সচ্ছ্বল প্রতিযোগীদের মোকাবেলা করা। পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন এই কাজটি হাজার হাজার উদ্যোক্তা আর ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো করে যাচ্ছে।
আয়না যা দেখা যায় তার সামনাসামনি হওয়া। ওয়ালডেনে থোরিউ বলেছেন, “মানুষের মধ্যে অনেকেই নীরব হতাশায় জীবন কাটায়।” তাই তো আমাদের অনেকেই অস্বীকৃতির মাঝে বাস করি কারণ আমরা আসলে যেরকম সেভাবে নিজেদেরকে দেখতে আমরা ভয় পাই।
নিজের স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে ভয়কে মোকাবেলা করা। শিশুর মত লাজুক কাউকে ভরা ক্লাসে সবার সামনে কথা বলতে বলবে সে যে জ্ঞান হারাবে না তা বলা যায় না। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল সেই লাজুক ব্যক্তিই হয়ে গেলেন একজন সিইও। অনেকেরই জনসম্মুখে কথা বলায় ভীতি কাজ করে। অনেক সফল ব্যক্তিদের মধ্যেও এই ভীতি ছিল।
সাহস আসে কোথা থেকে? কেউ সাহস নিয়ে জন্মায় না। অভিজ্ঞতার আলোকেই সাহস তৈরি করে নিতে হয়। যখনই আপনি আপনার ভয়কে মোকাবেলা করবেন, তখনই আপনার আত্ম-বিশ্বাস আর সাহস বাড়বে। ফলাফল যাই হোক না কেন, আপনার ভয়ের কারণে আপনি যা ভাবতেন ব্যাপারটা সেরকম নাও হতে পারে। এই জন্যই “আবার নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ানো”রূপকটি এতটা শক্তিশালী।
তাছাড়া, আপনি যতবার ভয়কে প্রশয় দেবেন, তা ততই বাড়বে। আগে হোক বা পরে, একসময় দেখবেন যে আপনার ভয় জয় করার আর কোন সুযোগই নেই আপনার হাতে। এবং এর ফলে আপনার সারা জীবনের আফসোস তৈরি হবে।
ভয় মোকাবেলা করা এবং আফসোসের সুযোগ না রাখা দুটোই প্রেরণা সৃষ্টির জন্য শক্তিশালী। এর কোন যথার্থ কারণ হয়ত নেই তবে এটি যে আপনার ক্যারিয়ার আর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নিশ্চিত।
আরেকটি কথা যা হলফ করে বলা যায় তা হল: আমাদের সবার মধ্যেই ভয় জয় করে সাহস তৈরি করার সমান সম্ভাবনা রয়েছে। এখন আপনি সেই সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগাবেন তার আপনার উপরই নির্ভর করবে।