আপনাকে গ্রাহকদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। কীভাবে এটি করবেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল।

আজকালকার দিনে ব্যবসায়ীরা যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে তা হলঃ “আমার গ্রাহকদেরকে আরো ভালভাবে আমাকে বুঝতে হবে, কিন্তু এটি সহজ হওয়ার চেয়ে দিন দিন আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।” কেন এই কথাটি অনেক উদ্যাক্তাদের জন্য সত্যি, চলুন দেখা যাকঃ

  • আগের তুলনায় গ্রাহকেরা বর্তমানে কম বিশ্বস্ত ও অনুগত। অর্থনৈতিক মন্দার ফলে যেসব ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য এ কথা প্রযোজ্য – যেমন ব্যাংকিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, জ্বালানী খাত, এয়ারলাইনস এবং মিডিয়া। আপনি যদি অন্য কোন ইন্ডাস্ট্রির আওতাভুক্ত হন, একই ধরনের প্রভাব আপনিও অনুভব করতে পারেন।
  • সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আগের তুলনায় এখন ভোক্তাদের ক্ষমতা বেশি, তারা অনলাইনে পণ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে পারছে এবং অনেক ধরনের পণ্য থেকে পছন্দেরটি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
  • গ্রাহকদের বৈচিত্র্য ক্রমশই বাড়ছে যার ফলে মাইক্রো-সেগমেন্টেশন এবং  গ্রাহকদের প্রতি অধিকতর দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
  • ইন্টারনেটে ড্যাটার সাথে এর অপব্যবহারের অনুপাত বাড়ার সাথে সাথে গ্রহকদের বুঝে উঠতে পারাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
  • অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ড্যাটা ওভারলোডের কারণে গ্রাহকরাও  বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, যার ফলে তারা নমনীয় ও মানিয়ে নেওয়ার মত সমাধানের অংশ হিসেবে পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে কিছুটা অনাগ্রহী হয়ে উঠে।

অধিক চাহিদা সম্পন্ন গ্রাহকদের আপন করে নিতে, আপনাকে তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সবকিছু দেখতে হবে।  এটি করার ৫টি পন্থা এখানে বাতলে দেওয়া হলঃ

  • নিজেকে গ্রাহকের অবস্থানে বসান – নিজের ব্যবসার আওতার বাইরে গিয়ে আপনার গ্রাহকের সবগুলো বিকল্প বোঝার চেষ্টা করুন, এছাড়াও তার পরিবেশক, অংশীদারসহ আশপাশের জগতকে বোঝার চেষ্টা করুন যেখানে আপনিও একটি অংশ। এটি অনুশীলনের ফলে আপনি আপনার প্রতিযোগী এবং তাদের পদক্ষেপগুলো ভালভাবে বুঝে উঠতে পারবেন।
  • গ্রহকের অর্ডারের সাথে নিজেকে যুক্ত করুন – আপনার কোম্পানিতে গ্রাহকরা কেমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে তার দিকে দৃষ্টি রাখুন এবং কখনও সেই অভিজ্ঞতা তিক্ত রূপ নিচ্ছে কিনা তা খেয়াল করুন। কোন মালিক হয়ত তার ম্যানেজারকে কোম্পানির কল সেন্টারে গ্রাহক সেজে কল করতে বলতে পারে এটা দেখার জন্য যে অন্য গ্রাহকরা কী ধরনের অভিজ্ঞতার স্মমুখীন হয় সেখানে। যদি গ্রাহক অভিজ্ঞতার সাথে নিজেকে সরাসরি সম্পৃক্ত না করতে পারেন, তাহলে আপনার কোম্পানিতে যেসব জায়গায় গ্রাহক অভিজ্ঞতার সম্ভাবনা থাকে সেসব জায়গায় আপনি রোল-প্লেয়িং অনুশীলনী করতে পারেন ।
  • নানা ধরনের গ্রাহক সেবা দল রাখুন – কোন কোম্পানি হয়ত তাদের ব্যাক অফিসের কাউকে তাদের মূল অফিসের গ্রাহক সেবা দলে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএম তাদের সিনিয়র দলকে প্রায়ই মাঠ পর্যায়ে পাঠায় যাতে তারা গ্রাহকদের সাথে সরাসরি দেখা করে তাদের চাহিদাগুলো ভালভাবে বুঝতে পারে এবং তাদেরকে আরো ভাল সেবা দিতে পারে।
  • গ্রাহকদের সাথে নিয়েই শিক্ষা গ্রহণ করুন – জিই (GE) গ্রুপ চায়নাতে তাদের শীর্ষ গ্রাহক, স্থানীয় এক্সিকিউটিভ ও অ্যাকাউন্ট মানেজারদেরকে নেতৃত্ব ও উদ্ভাবন বিষয়ক একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এর ফলে জিই এক্সিকিউটিভরা চায়নিজদের মানসিকতা এবং সেই মানসিকতায় কীভাবে প্রভাব ফেলা যায় তা বুঝে উঠতে সাহায্য করেছিল।
  • এগিয়ে যান এবং প্রত্যাশা রাখুন –  আগামীতে গ্রাহক কী চাইতে পারে তাতে দৃষ্টি দিন ঠিক যেভাবে স্টিভ জবস এবং রিচার্ড ব্র্যানসন দিয়েছিলেন। অবস্থা পরিকল্পনার মত অনুষঙ্গ দ্বারা ভবিষ্যত কেমন হবে তা জানার চেষ্টা করুন এবং তারপর বাজারের গতিপ্রকৃতি কীভাবে আপনার গ্রাহকদের প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন, যদি আপনি আপনার গ্রাহকদের ভালভাবে বুঝতে চান তবে মাঝে মাঝে আপনাকে আপনার অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে হবে। তৃতীয় কান দিয়ে আপনার গ্রাহকরা কী বলছে তা শোনার চেষ্টা করুন। যদি আপনি তাদের কথা ভালভাবে শোনেন, তাহলে তারা আপনাকে সবকিছু বলবে যা আপনার জানা থাকা খুব দরকার।

Similar Posts

Leave a Reply